সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সন্নিকটে।দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে তৃণমূলের নেতৃত্ব সুসংহত করার লক্ষ্যে বরিশাল মহানগরে শুরু হয়েছে ওয়ার্ড সম্মেলন।ইতিমধ্যে ১,২৪,২৫,২৬,২৯,২৮ ও ৩০ নং ওয়ার্ডে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।এই সম্মেলনে নেতাকর্মীদের মতের ওপর নির্ভর করছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্বে কে বা কারা আসছেন। ফলে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা যেমনি উজ্জীবিত তেমনি কমিটিতে স্থান পেতেও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক নন বা কোনদিন আ’লীগ করেননি এমন ব্যক্তি বিশেষরাও রয়েছেন এই সারিতে।যে কোন মুল্যে ওয়ার্ড কমিটিতে পদ পেতে তারা শীর্ষ নেতাদের কাছে লবিং তদ্বির চালানোর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থও ঢালছেন বলে শোনা গেছে।যদিও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অনেক আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন অন্য দল থেকে আসা অর্থাৎ অনুপ্রবেশকারী,বিতর্কিত বা রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়দের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে না।
কিন্তু শীর্ষ নেতৃবৃন্দের এমন বক্তব্যের পরেও দলের ত্যাগি ও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা রয়েছেন শঙ্কায়।বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে অনুসন্ধান চালিয়ে এবং নেতাকর্মীদের সাথে আলাপচারিতায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।সম্মেলন মনিটরিং কমিটি সদস্য বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হুমায়ুন কবির জানান, কেন্দ্রীয় আ’লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এক যুগের আগে গঠিত ওয়ার্ড কমিটিগুলো নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।প্রতিটি ওয়ার্ডে সম্মেলন করে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা এবং নেতাকর্মীদের চাওয়া পাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে বিচার বিশ্লেষণ করে তৃণমুলের চাহিদাকে প্রাধান্য দেবেন মহানগরের শীর্ষ নেতারা। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখা হচ্ছে যাতে করে নতুন কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী বা হাইব্রিডদের যেন স্থান না পায়।
কিন্তু শীর্ষ নেতৃবৃন্দের এমন অভয়ের পরেও আশ্বস্ত হতে পারছে না ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।অবশ্য এর স্বপক্ষে বেশকিছু যৌক্তিকতা তুলে ধরাও হচ্ছে।উদাহরণস্বরুপ দেখানো হচ্ছে নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডকে।কয়েক বছর ধরে এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন হারুন অর রশিদ বিশ্বাস।২০০৩ সালে এই ওয়ার্ডটিতে মুনসুর আহম্মেদ খানকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট রিপনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে বছর দুইয়েক আগে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে হারুন অর রশিদ বিশ্বাসকে আহবায়ক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এই কমিটির নেতৃবৃন্দ অধিকাংশ পদধারীরাই ছিলেন রাজনীতিতে নতুন মুখ।নেতাকর্মীদের অভিমত এই কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের মধ্যে অনেককেই বিগত সময়ে দলীয় কর্মসুচি বা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে দেখা যায়নি। কিন্তু সেই নতুন মুখেরাই এবারের কমিটিতে শীর্ষ স্থান পেতে শুরু করেছেন দৌড়ঝাপ।
সভাপতি পদে আসতে চাইছেন বর্তমান আহবায়ক হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, সাবেক সভাপতি মুনসুর আহমেদ খান,সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল আজাদ, আমির হোসেন মিঠু এবং এমরান চৌধুরী জামালসহ অন্তত হাফডর্জন নেতা। ইতিমধ্যে তারা ফরমও সংগ্রহ করেছেন। সভাপতি প্রার্থী হতে চাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল আজাদ ব্যতিত অধিকাংশের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। তাদের মধ্যে অনেকে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও ন্যাপ করারও উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিকালে এমরান চৌধুরী জামালের জাতীয় পার্টি থেকে আ’লীগে এসে বিতর্কিত কর্মকান্ডে মাধ্যমে বিষয়টি বেশিমাত্রায় আলোড়িত হচ্ছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে তৎসময়ে আ’লীগ কর্মীকে খুন করার গুরুতর অভিযোগটি এখনও কথিত রয়েছে। এছাড়া এমরান চৌধুরী জামালের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতিতেও জড়িত বলে শোনা গেছে।
জানা গেছে, জামালের আপন দুইভাই মুরাদ চৌধুরী ছাত্রদলের সাবেক কমিটির সদস্য ছোট ভাই আসাদ যুবদলের সাথে সম্পৃক্ত তার আপন চাচাতো ভাই লুপু চৌধুরী ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সহ-সভাপতি। আরেক চাচতো ভাই মনির চৌধুরী যুবদল,ইরান চৌধুরী জাতীয় পার্টি। অত্র পরিবারের অন্য কোনো সদস্য পূর্বে কখনো আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত ছিল না এবং এখনও নাই। জামাল চৌধুরি আওয়ামী লীগের কোন আন্দোলন-সংগ্রাম কখনো দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি। এদিকে অনুরুপভাবে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতার দৌড়ে রয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার,অ্যাডভোকেট রিপন,ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসির আহম্মেদ,গোলাম মোস্তফা, ইউনুস হাওলাদার, লাবু হাওলাদার এবং দবির সরদার। কিন্তু তাদের মধ্যে ইউনুস হাওলাদারকে নিয়ে রয়েছে তুমুল বিতর্ক।তিনি এক সময়ে জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে আ’লীগে যোগ দিলেও রাজনীতিতে ছিলেন নিস্ক্রিয়। দলীয় কোন কর্মসূচীতে যোগ দিতেন না। তার নেই কোন কর্মি। ফলে বর্তমানে পদ-পদবির জন্য একা একা মানে কর্মীবিহীন ভাবে পদ পেতে চাচ্ছেন তিনি এমনটি অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মিদের। নাম প্রকাশ শর্তে একাধিক কর্মি বলেন, বিএনপির শাসনামলে বিএনপি নেতা জিয়া উদ্দিন সিকদারের সাথে সখ্যতা রেখে চলেছেন ইউনুস হাওলাদার।তৃণমুলের অভিযোগ-প্রতিটি ওয়ার্ডের কমিটিতেই পদ পেতে অনেকই দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
ত্যাগি নেতাকর্মীদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে দুরে রাখতে তারা নানান কৌশল নেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ মহলে অর্থও ঢালছেন অনুপ্রবেশকারীরা। ফলে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডরা যে স্থান পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এমন বাস্তবতায় তৃণমুলের দাবি- অর্থ দেখে নয়,যারা দুর্দিনে আন্দোলন সংগ্রামে দলের পাশে ছিলেন এবং আছেন তাদেরই নেতৃত্বে নিয়ে আসা হোক। অবশ্য এবারের কাউন্সিলে এমটিই হতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করে সম্মেলন মনিটরিং কমিটি সদস্য বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলছেন,সবকিছু সম্পর্কে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ খোঁজ-খবর রাখছেন এবং সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। সুতরাং এবারের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী বা হাইব্রিডদের স্থান না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
Leave a Reply